৬৩০ বছরের রথযাত্রা বন্ধ পশ্চিমবঙ্গে: কি সত্যিই বাংলার ঐতিহ্য বিপন্ন?

ঐতিহ্যের গল্প: ৬৩০ বছরের পুরনো রথযাত্রা মালদার কালিয়াচকে

৬৩০ বছরের রথযাত্রা বন্ধ পশ্চিমবঙ্গে মালদার কালিয়াচকের জালালপুর রথযাত্রা। এই মেলায় শুধুমাত্র হিন্দুরাই নয়, বহু মুসলিম স্থানীয় বাসিন্দারাও সমানভাবে অংশগ্রহণ করতেন। এখানে হতো সার্কাস, গান, চিড়িয়াখানা, ভোগ, আরতি এবং কীর্তন। এই মেলা ছিল ধর্মীয় সম্প্রীতির অন্যতম উদাহরণ।
এই মেলায় প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মানুষ সমাগম করতেন, এবং মেলার রং ছড়িয়ে পড়ত সমগ্র অঞ্চলজুড়ে।


কেন বন্ধ হলো ৬৩০ বছরের রথযাত্রা?

মেলার উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পুলিশ প্রশাসন এবার এই মেলার অনুমতি দেয়নি। প্রশাসনের যুক্তি, এত বড় জমায়েতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা কঠিন হবে। তবে উদ্যোক্তাদের দাবি, এই মেলা কখনোই শান্তি নষ্ট করেনি। বরং হিন্দু-মুসলিম সকলের মিলনমেলা ছিল এই উৎসব।

অনেকের মতে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে আছে তোষণ নীতি এবং জমি দখলের পরিকল্পনা। এই মেলাটি দেবত্তর জমিতে হয়, এবং কিছু জমি মাফিয়ার লক্ষ্য এই জমি দখল করে বিক্রি করা।


জমি মাফিয়া এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, এই মেলা বন্ধ করার মাধ্যমে স্থানীয় জমি মাফিয়ারা দেবত্তর জমি দখলের সুযোগ পাবে।
যদি মেলা বন্ধ হয়, তবে জমিটি সহজেই প্লট করে বিক্রি করা যাবে।

বিজেপির মালদা দক্ষিণ সাংগঠনিক সভাপতি অজয় গাঙ্গুলী অভিযোগ করেন, প্রশাসন এবং শাসকদলের একাংশ একসঙ্গে কাজ করে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। তার মতে, পশ্চিমবঙ্গে বারবার হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব টার্গেট করা হচ্ছে।


মুসলিমদেরও ক্ষোভ: এটা তো আমাদের মেলা

এই ঘটনায় স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দারাও অসন্তুষ্ট। তারা বলছেন, এই মেলা শুধু হিন্দুদের নয়, গ্রামের সকলের। বহু মুসলিম দোকানদার মেলার সময় ব্যবসা করতেন, তাদের জীবন-জীবিকা এই মেলার উপর নির্ভরশীল ছিল।

একজন মুসলিম বৃদ্ধ বললেন:
“আমরা বাপ-দাদার সময় থেকে এই মেলায় যাই। গান, সার্কাস, দোকান, সব ধর্মের মানুষ আসতেন। এখন মেলা বন্ধ করে আমাদের ঐতিহ্য কেড়ে নিচ্ছে।”


প্রশাসনের নীরবতা: উত্তর মেলেনি পুলিশের

এই ব্যাপারে মালদার কালিয়াচক থানার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে থানার আইসি সুমন রায় ফোন ধরেননি।
মালদার এসপি প্রদীপ কুমার যাদব এর সাথেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রশ্ন উঠছে, যদি সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে পুলিশকে না পায়, তবে এই পুলিশের অস্তিত্বের মানে কি?
উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, প্রশাসনের আসল উদ্দেশ্য জমি মাফিয়াদের সুবিধা করে দেওয়া। কারণ মেলা না হলে, সেই জমি দ্রুত দখল করে ফেলা যাবে।


শাসক দলের মন্তব্য: প্রশাসনের সতর্কতা

তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেছেন, এখানে হয়তো কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় পুলিশ সতর্ক। তবে জমি মাফিয়ার সাথে পুলিশের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি আশাবাদী, সমস্যা মিটে যাবে এবং মেলা আবার শুরু হবে।


মেলার ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে: উদ্যোক্তাদের অভিযোগ

উদ্যোক্তা গৌতম মন্ডল বলেছেন, এই মেলায় হিন্দু-মুসলিম সবাই অংশ নেয়। এই মেলা শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, এটি গ্রামের অর্থনীতির সাথেও জড়িত। তিনি অভিযোগ করেন, জমি মাফিয়ারা এই জমি বিক্রির জন্য মেলা বন্ধ করতে চাইছে। পুলিশ যদি মেলার অনুমতি না দেয়, তাহলে এই জমি মাফিয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

৬৩০ বছরের রথযাত্রা বন্ধ পশ্চিমবঙ্গে

উপসংহার: ৬৩০ বছরের রথযাত্রা বন্ধ পশ্চিমবঙ্গে – কি অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতে?

৬৩০ বছরের রথযাত্রা বন্ধ পশ্চিমবঙ্গে ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, কীভাবে একের পর এক হিন্দুদের মেলা এবং উৎসব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
যদি এখন প্রতিবাদ না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো দুর্গাপূজার জন্যও হাইকোর্টে যেতে হবে।

জনগণের এখন ভাবার সময় এসেছে — পশ্চিমবঙ্গ কি নিজের ঐতিহ্য হারিয়ে পশ্চিম বাংলাদেশে পরিণত হচ্ছে?

Related Posts

21 July Shahid Dibas 2025: মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের ‘ঘর ভাঙা’ কৌশলে তৃণমূলের ভিত কাঁপছে!

21 July Shahid Dibas 2025 বাংলা রাজনীতির অন্যতম আলোচিত দিন। প্রতি বছর এই দিনটিকে শহিদ দিবস (Shahid Dibas) হিসেবে পালন করে Trinamool Congress (TMC)। ২০২৫ সালে সেই দিনের আবেগময় রাজনীতিতে…

PM Modi Durgapur Visit 2025: ৫০০০ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধনের আগে তৃণমূলের ‘কু-শাসন’ নিয়ে মোদির কড়া বার্তা

আগামী বছরের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই রাজ্যের রাজনৈতিক মঞ্চে জোরালো উপস্থিতি জানাতে ফের রাজ্যে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটি তাঁর গত দুই মাসে পশ্চিমবঙ্গ সফরের দ্বিতীয় পর্ব। PM…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *