
মেঘালয় হানিমুন হত্যা রহস্য নিয়ে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে বিয়ে করে হানিমুনে মেঘালয় গিয়েছিলেন সোনাম ও রাজা রঘুবংশী। কিন্তু এই স্বপ্নের সফর এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে পরিণত হবে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
মেঘালয় হানিমুন হত্যা রহস্য : নবদম্পতির নিখোঁজ হওয়া
১১ই মে বিয়ে হয় সোনাম ও রাজার। ২০শে মে তাঁরা হানিমুনের জন্য মেঘালয়ে পৌঁছান। ২২শে মে তাঁরা একটি বাইক ভাড়া করেন এবং মেঘালয়ের স্থানীয় দর্শনীয় স্থান ঘুরতে বের হন। পরদিন, ২৩শে মে, তাঁদের স্কুটারটি খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু দুজনেই ছিলেন নিখোঁজ। ২৪ তারিখ থেকে তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং ইন্দোরের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

রহস্য ঘনীভূত, পুলিশের তদন্ত
২৭শে মে থেকে মেঘালয় পুলিশ নিখোঁজ দম্পতিকে খুঁজে বের করার জন্য অভিযান শুরু করে। ২ জুন, একটি খাল থেকে রাজা রঘুবংশীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তবে সোনামের কোনো খোঁজ মিলছিল না। প্রথমদিকে সন্দেহ ছিল, সোনামকেও হয়তো অপহরণ করা হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশ সরকার এই ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করে। কিন্তু তদন্তে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসতে শুরু করে।
সোনামের নাটকীয় উদ্ধার এবং স্বীকারোক্তি
১০ই জুন রাতে উত্তর প্রদেশের গাজীপুরে এক ধাবায় কান্নারত অবস্থায় পাওয়া যায় সোনামকে। ধাবা মালিক তাঁর মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ দেন। তখনই জানা যায়, সে জীবিত এবং সুস্থ আছে। পরে ইউপি পুলিশ তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এই তদন্তেই সামনে আসে চমকপ্রদ তথ্য—মেঘালয় পুলিশের ডিজিপির ভাষ্যমতে, সোনাম নিজেই তার স্বামী রাজাকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল। তিনি তিনজন হিটম্যানকে ভাড়া করেছিলেন, যাদের মধ্যে অন্তত দুজন ছিলেন বাইরের রাজ্য থেকে আসা হিন্দি ভাষী ব্যক্তি। মেঘালয়ের কিছু লোকাল গাইডও জানিয়েছেন, এই তিনজনকে তাঁরা সোনামের সঙ্গেই দেখেছিলেন।
তিনজন খুনি ও সোনামের গ্রেফতার
তদন্তে পুলিশের হাতে আসা প্রমাণ অনুযায়ী, সোনাম এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত। ইতিমধ্যেই ওই তিন হিটম্যানকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। মেঘালয় পুলিশ ও ইন্দোর পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ঘটনার জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আলোড়ন ছড়িয়েছে। বিয়ের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই এমন এক নির্মম হত্যাকাণ্ড ও প্রতারণার ঘটনা সকলকে হতবাক করেছে। প্রেম, বিয়ে ও বিশ্বাসের নামে এই ষড়যন্ত্র ভবিষ্যতে আরো অনেক সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।
উপসংহার
মেঘালয় হানিমুন হত্যা রহস্য কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি একটি বিশ্বাসঘাতকতার নিদর্শন। পুলিশ, সিবিআই এবং গোটা দেশের মানুষ আজ প্রশ্ন করছে—কীভাবে এক নববধু নিজেই এমন ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করতে পারে? রাজা রঘুবংশীর পরিবার আজ ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষা করছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, কিন্তু এই কাহিনি সমাজে এক গভীর ছাপ রেখে গেল।