
মহেশতলা সংঘর্ষ: উত্তপ্ত পরিস্থিতির নেপথ্যে কি?
মহেশতলা সংঘর্ষ — এটি এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম আলোচিত ঘটনা। রবীন্দ্রনগর থানার পাশেই দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা এলাকাকে কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে। স্থানীয় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দোকান বসানো নিয়ে শুরু হয় তীব্র বাগ্বিতণ্ডা, আর তারই ফলশ্রুতিতে ঘটে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া, এবং একের পর এক হামলার ঘটনা।
প্রথমে দোকান বসানো নিয়ে সাধারণ তর্কবিতর্ক থাকলেও পরে তা দ্রুত সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপক্ষের মধ্যে প্রবল ইট বৃষ্টি চলতে থাকে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, পুলিশকে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে ব্যবস্থা নিতে হয়। এলাকায় ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য।
ঘটনাস্থলে থাকা আমাদের প্রতিবেদক আদি দত্ত জানিয়েছেন, সংঘর্ষ থামাতে বারবার চেষ্টা করেও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। দুপক্ষের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের জেরে উত্তেজনা দফায় দফায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। কেউ বলছেন মারধর হয়েছে, কেউ বলছেন দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, আবার কেউ অভিযোগ করছেন ইচ্ছাকৃত হামলা চালানো হয়েছে। এইসব অভিযোগের তদন্ত করছে পুলিশ।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা পুলিশের
এলাকায় উত্তেজনা প্রশমনের জন্য পুলিশ বারবার সতর্কতা জারি করছে। পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক হয়, সে জন্য দফায় দফায় পুলিশের টহল চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহেশতলা এখন কার্যত আতঙ্কের শহর।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেউ আইন হাতে নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বিধানসভায় নতুন বিতর্ক: শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য ঘিরে তৃণমূলের প্রতিবাদ
এই ঘটনার পাশাপাশি রাজ্য রাজনীতিতেও চলছে উত্তাল পরিস্থিতি। শুভেন্দু অধিকারীর মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে করা মন্তব্যকে ঘিরে বিধানসভায় স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ জারি করেছে তৃণমূল। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই নোটিশ প্রিভিলেজ কমিটিতে পাঠানো হয়েছে এবং এই বিষয়ে রিপোর্টও তৈরি হবে।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিরোধী দলনেতা বাইরে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা অসম্মানজনক এবং বিভ্রান্তিকর। বিরোধীরা যদিও বলছেন, বাইরে কে কি বলছে, সেটা বিধানসভার আলোচনার বিষয় হতে পারে না। এই নিয়ে প্রবল তর্ক-বিতর্ক, স্লোগান, এবং ওয়াকআউটের মধ্য দিয়ে চলেছে পুরো অধিবেশন।
বিশেষ করে অনুব্রত মন্ডলের মন্তব্য ও বিজেপির প্রতিবাদ এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে। একদিকে বিজেপি প্রতিবাদে সরব, অন্যদিকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী কখনও শত্রু দেশের পক্ষে কিছু বলেননি। বিরোধীরা বাইরে যা বলছে, তা হাউজের ভেতরে প্রমাণ করতে পারেনি।
উপসংহার
মহেশতলা সংঘর্ষের ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি দোকান বসানো নিয়ে শুরু হলেও, দ্রুত তা বড় আকার ধারণ করে। পুলিশ এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারী বনাম তৃণমূল সংঘাত নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে।
রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে রাস্তাঘাট — সর্বত্র উত্তেজনার আঁচ স্পষ্ট। আগামী দিনে এই পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকেই এখন সকলের নজর।