
সাম্প্রতিক নির্দেশিকায় সুপ্রিম কোর্ট একেবারে পরিষ্কার করে দিয়েছে, কারা কারা পরীক্ষায় বসতে পারবে না। তিনটি শ্রেণির অযোগ্য প্রার্থীদের বেছে নিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা আর পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে না। এই তালিকায় রয়েছে:
১. ওএমআর সিটে কারচুপি (সাদা খাতা জমা, ওএমআর ঘাপলা),
২. মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেল থেকে নিয়োগ,
৩. র্যাংক জাম্প করে চাকরি পাওয়া প্রার্থীরা।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি পুরনো বক্তব্য আবার সামনে এসেছে। তিনি একসময়ে বলেছিলেন,
“বেঁচে থাকাকালীন যোগ্য প্রার্থীদের কারো চাকরি কেড়ে নিতে দেব না। ইট ইজ মাই কমিটমেন্ট।”
এই বক্তব্যে অনেকেই আশার আলো দেখেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে মুখ্যমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর।

চাকরি বাতিলের পর মুখ্যমন্ত্রীর এই হিট অফ দ্য মোমেন্ট বক্তব্য অনেককেই সাময়িক স্বস্তি দিলেও, বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। আগুন লাগার সময় মুখ্যমন্ত্রী হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিলেন। কারণ, সেসময় কঠোর বক্তব্য দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠত। তাই হয়তো তিনি বলেছিলেন,
“আমি যোগ্যদের আগে রাখব, তারপর অযোগ্যদের দেখছি।”
কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এখন দেখা যাচ্ছে, অযোগ্যদের আগে দেখা হচ্ছে, আর যোগ্যদের বলি দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। ওএমআর সিটও জনসমক্ষে আনা হয়নি। বরং শিক্ষকরা নিজেদের এলাকায় গিয়ে স্কুল থেকে চুপিসারে বার্তা পেয়েছেন — কে স্কুলে যাবেন আর কে যাবেন না। এই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলন চলছে, কিন্তু কী লাভ?
বিকাশ ভবনের সামনে এখনো আন্দোলন চলছে। কিন্তু সেই আন্দোলনেও বিভাজন তৈরি হয়েছে। একদল বলছে “আমরা পলিটিক্স করব না”, আবার অন্যদিকে শুরু হয়েছে পারস্পরিক দোষারোপ — “তুই বিজেপির দালাল”, “তুই সিপিএম-এর দালাল”, “তুই কংগ্রেসের লোক”। আসল যাদের জন্য ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হলো, অর্থাৎ যারা ঘুষ নিয়েছে, তাদের কেউ প্রশ্ন করছে না।
আদালতের অবস্থান স্পষ্ট
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য সরকার যদি রিভিউ পিটিশনে নতুন কিছু আপডেট বা ব্যাখ্যা না দেয়, তাহলে আগের রায় বহাল থাকবে। ৩১ মে-র মধ্যে সরকারকে জানাতে হবে কীভাবে পরীক্ষা হবে এবং বছরের শেষের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
উপসংহার
এই মুহূর্তে স্পষ্টভাবে বলা যায়, যারা ওএমআর কারচুপি, মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেল এবং র্যাংক জাম্পের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছিলেন, তারা আর পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই তালিকায় অনেক যোগ্য প্রার্থীও ভুলবশত পড়ে গেছেন। যেহেতু যোগ্য-অযোগ্য তালিকা আজও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করা হয়নি, তাই সাধারণ মানুষ অন্ধকারেই রয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র আন্দোলন নয়, দরকার স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা এবং বিচারপ্রার্থীদের প্রতি মানবিকতা।