
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া Cyclone Shakti গভীর নিম্নচাপ ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে একটি সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ে (Rain & Storm) পরিণত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে। আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড় যদি পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হয়, তবে এর নাম হবে ‘Cyclone Shakti’। এই নামটি শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবিত তালিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই একাধিক আন্তর্জাতিক আবহাওয়া গবেষণা মডেল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে পারে এবং তার আগে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
শক্তির সম্ভাব্য গতিপথ
আবহাওয়া দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৭ মে থেকে নিম্নচাপটি আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করবে এবং ২৮ ও ২৯ মে-র মধ্যে এটি একটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ণ রূপ নিতে পারে। প্রথম ধাপে এটি উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ওড়িশার ভদ্রক উপকূলের দিকে যাবে। পরবর্তীকালে এটি দিক পরিবর্তন করে বাংলাদেশের মংলা ও খেপুপাড়া উপকূলের দিকে ধেয়ে যাবে এবং সেখানেই স্থলভাগে আঘাত হানার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতেও (যেমন সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার) তার প্রভাব ফেলতে পারে। ওই অঞ্চলগুলিতে ঝোড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টিপাত ও সমুদ্র উত্তাল থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

আরব সাগরের পরিস্থিতি
অন্যদিকে, আরব সাগরেও একটি ঘূর্ণিঝড় গঠনের সম্ভাবনা ছিল, তবে তা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটক উপকূলে টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার প্রভাবে সেখানকার নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারেনি। ফলে, ‘শক্তি’ নামটি এখন বঙ্গোপসাগরের এই সিস্টেমের জন্যই বরাদ্দ হতে পারে।
বাস্তব পরিস্থিতি ও শক্তি সঞ্চয়
২৪ মে পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটি স্থিতিশীলভাবে শক্তি সঞ্চয় করে চলেছে, তবে এখনও তেমন বৃষ্টিপাত শুরু হয়নি। এটি ইঙ্গিত দেয় যে সিস্টেমটি আরও শক্তিশালী হয়ে ধীরে ধীরে স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এটি ব্যাপক বিধ্বংসী হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ও সতর্কতা
উত্তাল সমুদ্র ও জলোচ্ছ্বাস:
২৮ থেকে ৩০ মে-র মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে সমুদ্র মারাত্মক উত্তাল থাকবে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে নিচু এলাকাগুলি প্লাবিত হতে পারে। নদী বাঁধ উপচে জল ঢুকে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

প্রবল বৃষ্টিপাত:
কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি এবং ঝাড়গ্রামে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। শহরাঞ্চলে জল জমে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঝোড়ো হাওয়া:
উপকূলবর্তী এলাকায় ঘণ্টায় ৫০-৭০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে, যা সর্বোচ্চ ৯০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। অন্যান্য জেলাগুলিতে ৩৫-৫৫ কিমি বেগে হাওয়া বইতে পারে।
টর্নেডো ও ঘূর্ণিবাত্য:
ঘূর্ণিঝড় ও মৌসুমী বায়ুর যুগ্ম প্রভাবে সমুদ্র উপকূলে ওয়াটার স্পাউট এবং বিভিন্ন অঞ্চলে ছোটখাটো টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাঁধ ও ঘরবাড়ি:
নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়া, নদী বাঁধ ভেঙে যাওয়া এবং কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
বিপদসংকেত এলাকাগুলি:
বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে:
- পূর্ব মেদিনীপুর
- দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা
- হাওড়া
- হুগলি
- কলকাতা
- ঝাড়গ্রাম
এই সমস্ত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের করণীয়
- উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
- মৎস্যজীবীদের ২৬ মে থেকে সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছে।
- কৃষকদের যত দ্রুত সম্ভব ফসল ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
- শহরবাসীদের ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপসংহার
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তবে এটি দক্ষিণবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে বড় ধরণের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। প্রশাসন ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং সবরকম উদ্ধার ও ত্রাণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সরকারি নির্দেশ মেনে সচেতন ও সতর্ক থাকার আবেদন জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়মিত নজরদারিতে রাখা হচ্ছে এবং আবহাওয়া দপ্তরের পরবর্তী আপডেটের দিকেই এখন সকলের নজর।