
21 July Shahid Dibas 2025 বাংলা রাজনীতির অন্যতম আলোচিত দিন। প্রতি বছর এই দিনটিকে শহিদ দিবস (Shahid Dibas) হিসেবে পালন করে Trinamool Congress (TMC)। ২০২৫ সালে সেই দিনের আবেগময় রাজনীতিতে এবার ঢুকে পড়েছে এক বড়সড় কাঁপুনি — একদিকে ধর্মতলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের শক্তিপ্রদর্শন, অন্যদিকে মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে তৃণমূলের ঘরভাঙা চমক।
এই ঘরভাঙা শুধু কিছু কর্মীর দলবদল নয়, বরং শহিদ দিবসের মূল মঞ্চ থেকে তৃণমূলের আদর্শ ও বার্তার বিরুদ্ধেই এক প্রকাশ্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
🏛️ ধর্মতলায় তৃণমূলের শক্তি, আবেগ আর মঞ্চে ভুল বার্তা
প্রতি বছরের মতো এবারও ধর্মতলা (Dharmatala) সাক্ষী হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেগঘন ভাষণের। তিনি ভাষা, সংস্কৃতি ও শহিদদের স্মরণে মুখর ছিলেন।
কিন্তু এই আবেগের মাঝে ঘটে গেল একাধিক বিতর্ক। দলীয় মন্ত্রী শহিদ দিবসের মঞ্চে কবি অতুল প্রসাদ সেন-এর বিখ্যাত লাইন বিকৃত করে পড়েন:
“নানা ভাষা, নানা মৃত্যু, নানা মত” — যা আদতে হওয়া উচিত ছিল:
“নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান; বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান”।
আরও আশ্চর্যের বিষয়, মঞ্চে বলা হয় — “সারে জাহাঁ সে আচ্ছা” গানটি নাকি নজরুল ইসলাম লিখেছেন!
বাস্তবে এটি লিখেছেন মহম্মদ ইকবাল।
এই ভুলে বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতি রক্ষার দাবিতে তোলা স্লোগান হয়ে ওঠে নিছক বিদ্রূপ।
🛑 মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের পাল্টা কৌশল: ঘর ভাঙা, দল বাড়ানো
ধর্মতলার এই আবেগের দিনে মেদিনীপুর (Medinipur) সাক্ষী হল ভিন্ন রাজনৈতিক নাটকের।
BJP নেতা Dilip Ghosh এই দিনটিকে বেছে নেন তৃণমূল থেকে শতাধিক কর্মী ও সমর্থকদের নিজের দলে টানতে।
তিনি বলেন —
“২১ জুলাই আজ আর শহিদদের নয়, তৃণমূলের সার্কাসের দিন। যারা শহিদের রক্তের রাজনীতি করছে, তাদের মুখোশ খুলে যাবে।”
খড়গপুরে (Kharagpur) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি শ্রীকৃষ্ণ ও কেদারনাথের নাম করে বলেন, বাংলার হিন্দু সংস্কৃতিও এখন রাজনীতির শিকার।
⚔️ মমতার বিরুদ্ধে অভিযোগ: ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ, অনুপ্রবেশ, বাংলা ভাষার দ্বিচারিতা
দিলীপ ঘোষ সরাসরি বলেন —
“একদিকে TMC ধর্মীয় সহনশীলতার মুখোশ পরে, অন্যদিকে অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করে। যেখানেই হিন্দু সংস্কৃতি, সেখানে আঘাত আসে এই শাসক দলের দিক থেকেই।”
তিনি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জগন্নাথ মন্দির দর্শনকে ‘ভণ্ডামি’ আখ্যা দিয়ে বলেন —
“যারা হিন্দু সংস্কৃতিকে বুঝে না, তারাই এখন মন্দিরে গিয়ে নাটক করছে!”
এছাড়াও তিনি অভিযোগ করেন, সরকার বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ এবং “বুলডোজার” চালানোর যে প্রয়োজন, তা এই সরকারে সম্ভব নয়।

🧠 বাংলার সংস্কৃতি ও মনীষীদের প্রতি অজ্ঞতা?
21 July Shahid Dibas 2025-এর ভাষণ ঘিরে যখন বাংলার গৌরব নিয়ে গলা ফাটে, তখনই প্রশ্ন ওঠে — সত্যিই কি তাঁরা ইতিহাস জানেন?
দিলীপ ঘোষ বলেন —
“রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুল ইসলাম — এরা প্রত্যেকেই বাংলার। তাঁদের সৃষ্টিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে আপনি বাংলার সংস্কৃতিকে রক্ষা করবেন কিভাবে?”
তিনি কটাক্ষ করে বলেন —
“বছরে একদিন বাংলা ভাষার কথা বলেই তো বাংলা রক্ষা হয় না!”
🔥 ‘Circus Party’ তকমা পেল তৃণমূল
দিলীপ ঘোষ ধর্মতলার তৃণমূল সভাকে “Circus Show” বলে কটাক্ষ করেন।
তিনি বলেন —
“একদিকে গান, অন্যদিকে ভুল কবিতা, ভুল ইতিহাস। এই কি বাংলা রক্ষা?”
BJP নেতার মতে, তৃণমূল এখন আদর্শহীন, নাটকবাজ ও বিভ্রান্তিকর বার্তার দল।
🔁 দিলীপের হুঙ্কার: মেদিনীপুর থেকে শুরু, এবার গোটা বাংলা
দিলীপ ঘোষের দাবি, মেদিনীপুরে যেভাবে ঘরভাঙা শুরু হয়েছে, তা এখন থেকে রাজ্যের সব ব্লকে চলবে।
“তৃণমূল এখন আতঙ্কে। তারা জানে — বিজেপি ঘরে ঢুকে গেছে।”
তিনি আরও বলেন —
“রক্ত দিয়ে গড়া তৃণমূলকে যারা ছাড়ছেন, তারা বুঝে গেছেন, তৃণমূল আর শহিদদের দল নয়, এটা এখন ব্যবসার দল।”
📌 উপসংহার: ২১ জুলাই এখন আর শুধুই আবেগ নয়, রাজনৈতিক লড়াইয়ের দিকদর্শন
21 July Shahid Dibas 2025 আমাদের বুঝিয়ে দিল, বাংলার রাজনীতিতে আবেগ আর বাস্তবতা, শক্তি আর কৌশল এখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
ধর্মতলায় যত বড় মঞ্চই হোক না কেন, যদি ভিত নড়ে যায় — তবেই আসল ধাক্কা লাগে।
এবছর সেই ধাক্কা দিলেন Dilip Ghosh, আর মঞ্চেই মুখ থুবড়ে পড়ল তৃণমূলের আত্মতুষ্টি।