
উত্তরাখণ্ডে ফের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা, সাত জনের করুণ মৃত্যু, চারধাম হেলিকপ্টার পরিষেবা সাময়িক বন্ধ
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা উত্তরাখণ্ডে: কী ঘটেছিল সেই ভয়াবহ সকালে?
উত্তরাখণ্ডের গাড়িগুণ্ড জঙ্গলে ঘটে গেল আরেকটি মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা। আর্যন এভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টার কেদারনাথ থেকে গুপতকাশীর পথে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। হেলিকপ্টারটিতে মোট সাতজন যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে একজন মাত্র দুই বছরের শিশু। সকল যাত্রী এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।
ঘটনাটি ঘটে আজ সকালে, যখন হেলিকপ্টারটি কেদারনাথ হেলিপ্যাড থেকে সকাল ৫:১৭ মিনিটে উড্ডয়ন করে। যাত্রীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই খারাপ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রুট থেকে সরে যায়। প্রথমে হেলিকপ্টারটি নিখোঁজ বলে ধরা হয়েছিল, তবে পরে প্রশাসন নিশ্চিত করে যে এটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
হেলিকপ্টার পরিষেবা সাময়িক বন্ধ: চরম সতর্কতা প্রশাসনের
দুর্ঘটনার পরই উত্তরাখণ্ড প্রশাসন এবং DGCA (Directorate General of Civil Aviation) চারধাম হেলিকপ্টার পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে খারাপ আবহাওয়া এবং ঘন কুয়াশাকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হেলিকপ্টার পরিষেবা কবে পুনরায় চালু হবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
DGCA এবং আর্যন এভিয়েশনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। SDRF (State Disaster Response Force) এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
উদ্ধার অভিযানের বর্ণনা: ঘন কুয়াশা ও টানা বৃষ্টির চ্যালেঞ্জ
SDRF-এর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দুর্ঘটনার খবর পৌঁছানোর পর সঙ্গে সঙ্গে একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তবে, উদ্ধার অভিযান ছিল অত্যন্ত কঠিন। গাড়িগুণ্ডের সেই দুর্ঘটনাস্থলটি গভীর জঙ্গলে অবস্থিত এবং সেখানে পৌঁছাতে টানা তিন থেকে চার ঘণ্টা ট্রেক করতে হয়।
ঘন কুয়াশা, টানা বৃষ্টি এবং দুর্গম পথ উদ্ধারকারীদের কাজকে আরও কঠিন করে তোলে। SDRF-এর সদস্যরা সমস্ত প্রয়োজনীয় উদ্ধার সরঞ্জাম বহন করে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং সেখানে সাতজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে মৃতদেহগুলো রোডহেড পর্যন্ত নিয়ে আসা হয় এবং সেখান থেকে পুলিশ প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

উদ্ধারকারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম: মানবিক প্রচেষ্টা প্রশংসিত
উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দ্রুত পদক্ষেপে প্রশাসন সন্তোষ প্রকাশ করেছে। কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ, বৃষ্টিপাত এবং দুর্গম পাহাড়ি পথে এত দ্রুত পৌঁছে উদ্ধার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করায় SDRF-এর দল প্রশংসার দাবি রাখে।
উপসংহার: ফের একবার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় সতর্ক বার্তা
এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা উত্তরাখণ্ডে ফের একবার প্রমাণ করে দিল, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে উড়ান চালানো সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে খারাপ আবহাওয়ার সময় পাহাড়ি হেলিকপ্টার পরিষেবা চালানো অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। DGCA ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এরকম দুর্ঘটনা এড়াতে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।
হেলিকপ্টার পরিষেবা পুনরায় চালু হবে কিনা এবং কবে চালু হবে তা নির্ভর করছে আবহাওয়া ও তদন্তের অগ্রগতি উপর। আপাতত চারধাম হেলিকপ্টার পরিষেবা বন্ধ রয়েছে এবং পর্যটকদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।