ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সিজফায়ার বিতর্ক: ট্রাম্পের দাবি খারিজ, দিল্লির কড়া বার্তা

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সিজফায়ার বিতর্ক, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সিজফায়ার’ দাবি খারিজ, ভারত পুনরায় জানাল – অপারেশন সিন্ধূর চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনও বাণিজ্য আলোচনা হয়নি

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘সিজফায়ার’ দাবি খারিজ করে দেওয়ার পর, ভারত ফের একবার স্পষ্ট জানিয়ে দিল যে ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত চলা ‘অপারেশন সিন্ধূর’ এর সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য কিংবা শুল্ক নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।

বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জৈসওয়াল বলেন, “অপারেশন সিন্ধূর ৭ই মে শুরু হওয়ার পর থেকে ১০ই মে অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্ত পর্যন্ত, ভারতের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং মার্কিন নেতৃত্বের মধ্যে সামরিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে সেই সময় বাণিজ্য বা ট্যারিফ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।”

তিনি এ কথাও স্পষ্ট করে দেন যে, “বাণিজ্য সংক্রান্ত কোনও বিষয় আলোচনায় উঠে আসেনি এবং অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সামরিক যোগাযোগের ফল।”

এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপট ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে চলা একটি মামলার, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা — বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লাটনিক এবং পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও — দাবি করেছিলেন, ট্রাম্পের ট্যারিফ হুমকি এবং বাণিজ্য সুবিধার প্রতিশ্রুতি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিজফায়ার সম্ভব হয়।

লাটনিক আদালতে বলেন, “যদি আদালত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে সীমিত করে, তাহলে ভারত ও পাকিস্তান ট্রাম্পের প্রস্তাবকে আর গুরুত্ব দেবে না। এর ফলে গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে, এবং কোটি কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে।”

তবে আদালত এই যুক্তিকে মানেনি এবং ট্রাম্পের ‘লিবারেশন ডে’ ট্যারিফ ব্লক করে দিয়েছে।

এর আগেও ভারত একাধিকবার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কোনওভাবেই এই অস্ত্রবিরতির মধ্যস্থতাকারী নয় এবং কাশ্মীর ইস্যুতে কোনও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের জায়গা নেই। বৃহস্পতিবারের প্রেস ব্রিফিংয়ে এই অবস্থান আবারো পুনর্ব্যক্ত করেন জৈসওয়াল। তিনি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেলস অফ মিলিটারি অপারেশনস (DGMOs) একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের যেকোনও আলোচনা, সম্পূর্ণভাবে দ্বিপাক্ষিক হবে। এটা আমাদের স্পষ্ট এবং ধারাবাহিক অবস্থান।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের একটি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট বলেন, আন্তর্জাতিক কোনও মধ্যস্থতার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, “যখন দুটি দেশ সংঘাতে জড়ায়, তখন বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে, ফোন করে অবস্থা জানতে চায়। কিন্তু অস্ত্রবিরতি ও সামরিক অভিযান থামানোর সিদ্ধান্তটা একান্তই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা করে হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা এটা সকলকে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, যারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে, তাদেরও জানিয়েছি – যদি পাকিস্তান লড়াই থামাতে চায়, তাহলে সেটা আমাদের সরাসরি জানাতে হবে। তাদের জেনারেলকে আমাদের জেনারেলকে ফোন করে বলতে হবে। এবং ঠিক সেটাই হয়েছে।”

তবে, ট্রাম্প সিজফায়ার ঘোষণার পর থেকে একাধিকবার দাবি করেছেন যে তিনিই এই সিজফায়ারের মধ্যস্থতা করেছেন এবং ভারতের ওপর বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েই তিনি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। ভারত একাধিকবার এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এখনও একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির ওপর কাজ করছে, যার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। ভারত চায়, ট্রাম্প সরকারের আরোপিত ২৬ শতাংশ শুল্ক থেকে ছাড় পেতে। এই শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে ৯ জুলাই পর্যন্ত। তবে ১০ শতাংশ বেসলাইন ট্যারিফ এখনও কার্যকর রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, “কোনও বাণিজ্য চুক্তি তখনই টেকসই হবে, যদি তা উভয় দেশের জন্য উপকারী হয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এখনই কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না। সময়মতো আলোচনার ফলাফল আমরা জানাব।”

এ থেকে বোঝা যায়, সাম্প্রতিক সামরিক ও কূটনৈতিক উত্তাপের মধ্যেও ভারত তার নীতি ও অবস্থানে অটল রয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে কোনও তৃতীয় পক্ষকে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে প্রবেশাধিকার দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়ও সেই অবস্থানকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে।

Related Posts

21 July Shahid Dibas 2025: মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের ‘ঘর ভাঙা’ কৌশলে তৃণমূলের ভিত কাঁপছে!

21 July Shahid Dibas 2025 বাংলা রাজনীতির অন্যতম আলোচিত দিন। প্রতি বছর এই দিনটিকে শহিদ দিবস (Shahid Dibas) হিসেবে পালন করে Trinamool Congress (TMC)। ২০২৫ সালে সেই দিনের আবেগময় রাজনীতিতে…

21 July Shahid Dibas 2025: ধর্মতলায় কর্মী-সমর্থকদের ঢল, গোটা কলকাতা নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা

21 July Shahid Dibas 2025—শুধু একটি তারিখ নয়, এটি West Bengal-এর রাজনীতিতে এক গভীর আবেগের নাম। প্রতি বছর এই দিনে Trinamool Congress (TMC) শহিদ দিবস বা Shahid Dibas পালন করে,…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *