
আদালতে তোষণের রাজনীতি: আদালতের অবমাননার চরম উদাহরণ
তোষণের রাজনীতি — এই শব্দটাই আজকের আলোচনার মূল বিষয়। শুরুতেই জানিয়ে রাখি, এই তোষণের রাজনীতি আজ শুধু এক রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, বরং আদালতের চোখে এটি চরম অবমাননার প্রতিচ্ছবি। এই ঘটনার প্রতিটি ধাপে তোষণের রাজনীতিস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেবল রাজনীতির প্রয়োজনে, আইনের প্রতি সম্মানহীন এবং একটি প্রজন্মকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়।

আদালতের রায় অমান্য করে তোষণের রাজনীতি: ঘটনা কী?
বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং রাজাশেখর মান্থার এজলাসে রাজ্য সরকারের কর্মকাণ্ড চরম প্রশ্নের মুখে পড়ে। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার বারবার ধর্মের ভিত্তিতে ওবিসি তালিকা তৈরি করছে, যা সংবিধান স্বীকার করে না। তারা বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোনোক্রমেই তোষণের রাজনীতি চলতে পারে না।
রাজ্য সরকার ৭৬টি সম্প্রদায়কে নতুন করে ওবিসি তালিকায় যুক্ত করে, যেখানে হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই সেই তালিকাকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। আদালত প্রশ্ন তোলে, কেন ২০১০ সালের পূর্বের বৈধ ৬৬টি সম্প্রদায়ের জন্য কাজ না করে নতুন তালিকা বানানোর এত আগ্রহ?
কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া বার্তা: বিপজ্জনক ডেমোগ্রাফিক প্রভাব
কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক কুমার চক্রবর্তী স্পষ্ট বলেন, এই তোষণের রাজনীতি দেশের জন্য বিপজ্জনক ডেমোগ্রাফিক প্রভাব ফেলবে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এনসিবিসি-র বৈঠকে বসেন এবং বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখেন।
এখানে উঠে আসে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ— রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণী কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। অর্থাৎ, রাজনৈতিক চাপেই এই তোষণের রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের রায় অবমাননা: ভয়ঙ্কর সত্য
যখন রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বললেন, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, বিচারপতি তখনই প্রশ্ন তোলেন— তাহলে রাজ্য সরকার কীভাবে প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর যখন রাজ্য দিতে পারেনি, তখন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বাসুরি স্বরাজ দলিল তুলে ধরে প্রমাণ করে দেন যে, রাজ্য সরকার হাইকোর্টের ২২ মে ২০২৪ সালের রায় মানেনি, জনগণনা করেনি এবং সমীক্ষা ছাড়া ওবিসি তালিকায় সম্প্রদায় যুক্ত করেছে।
বাসুরি স্বরাজের বক্তব্য এতটাই শক্তিশালী ছিল যে রাজ্যের কাছে আর কোন সদুত্তর ছিল না। এতে স্পষ্ট হয়, আদালতের অবমাননা এবং রাজনৈতিক স্বার্থের জন্যই তোষণের রাজনীতি করা হয়েছে।
নতুন ওবিসি তালিকার ভয়ঙ্কর গোপন গল্প
নতুন ওবিসি তালিকায় মোট ১৪০টি সম্প্রদায় রয়েছে। এর মধ্যে ৭৬টি সম্প্রদায় হাইকোর্ট বাতিল করেছিল, যা আবার নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য:
- ওবিসি ‘এ’ তালিকায় (প্রধানত মুসলিম এবং নন-হিন্দু সম্প্রদায়) মোট শতাংশ: ৭৩.৪%
- ওবিসি ‘বি’ তালিকায় (শুধু হিন্দু সম্প্রদায়) মোট শতাংশ: ৪৮.৩%
এই সংখ্যাতেই প্রমাণ হয়ে যায়, ধর্মের ভিত্তিতে রিজার্ভেশন দেওয়া হচ্ছে, যা সংবিধান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে।
রাজ্য সরকারের স্পষ্ট উদ্দেশ্য: শুধুই তোষণের রাজনীতি
বিচারপতিরা এক বাক্যে বলে দেন— রাজ্য সরকার আদালতের রায় অমান্য করেছেন, জনগণনা করেননি এবং ধর্মের ভিত্তিতে তোষণের রাজনীতি করছেন। সমস্ত দলিল, সংখ্যার বিশ্লেষণ এবং রাজনৈতিক বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে, স্পষ্ট বোঝা যায়— এই পুরো প্রক্রিয়াই শুধুমাত্র ভোট রাজনীতির জন্য।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর আগের একটি ভিডিওতেও তিনি পরিষ্কার বলেন— মুসলিম সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকা থেকে বাদ দেব না। এমন বক্তব্য শুধু আদালতের নির্দেশ নয়, গণতন্ত্রের মূল নীতিরও অবমাননা।
আদালতের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত:
- হাইকোর্টের রায় মেনে জনগণনা না করার অভিযোগ প্রমাণিত।
- নতুন ওবিসি তালিকায় অবৈধ সম্প্রদায় যুক্ত করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
- ধর্মের ভিত্তিতে রিজার্ভেশন দেওয়া হয়েছে।
- রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
- কেন্দ্রীয় সরকারের আশঙ্কা— ডেমোগ্রাফিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা।
উপসংহার
এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল— প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের আড়ালে কীভাবে তোষণের রাজনীতি চলে। আদালতের কড়া অবস্থান এবং সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ দেখিয়ে দিয়েছে, কোনও অবস্থাতেই আইনকে অবজ্ঞা করে রাজনীতি চলতে পারে না।
তোষণের রাজনীতি দেশের জন্য ভয়ঙ্কর এক উদাহরণ হয়ে থাকবে, যা আগামী দিনের জন্য সতর্কবার্তা।