টেট দুর্নীতি ঘিরে চাঞ্চল্য: ১২ লক্ষ টাকায় চাকরির প্রলোভন, ইমেইল মারফত জানানো হলো অযোগ্যকেই ‘যোগ্য’

টেট দুর্নীতি ঘিরে রাজ্যের প্রাথমিক নিয়োগে ফের বিস্ফোরক অভিযোগ। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তে নামছে পুলিশ। চাকরিপ্রার্থীর হাতে ইমেইল মারফত পৌঁছে গেল টেট উত্তীর্ণের বার্তা, কিন্তু তারপর?


বিস্তারিত প্রতিবেদন:

পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আবারও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এক অযোগ্য প্রার্থীকে ইমেইলের মাধ্যমে টেট উত্তীর্ণ হিসেবে জানানো হয়েছে এবং তার কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নামে ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। হাইকোর্টে দায়ের হওয়া এক মামলায় উঠে এসেছে এমনই বিস্ফোরক তথ্য, যা ঘিরে ফের প্রশ্ন উঠেছে নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সুদীপ কর্মকার নামক এক চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে। সুদীপ জানান, তিনি ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষায় বসেছিলেন, কিন্তু পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। এরপর এক স্থানীয় ব্যক্তি এস. ঘোষের মাধ্যমে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তাকে। শুরুতে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কাজ হবে বলা হয়। সুদীপের পরিবার জমি বিক্রি করে সেই টাকা জোগাড় করে দেন।

ইমেইলে এল ‘যোগ্য’ ঘোষণার বার্তা!

সুদীপের দাবি, ২০২2 সালের ২৮ এপ্রিল বিকাল ৪টা ১৯ মিনিটে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসিয়াল ইমেইল আইডি থেকে একটি মেইল আসে, যেখানে তাকে টেট উত্তীর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং পরের দিন অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল কাউন্সেলিং-এর জন্য ডাকা হয়। সে অনুযায়ী তিনি নির্ধারিত স্থানে গিয়ে সাদা কাগজে সইও করেন।

তবে এখানেই শেষ নয়। এরপর আরও দাবি করা হয় যে, চাকরি পেতে হলে অতিরিক্ত ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে। সুদীপ সেই টাকা অনলাইনে পাঠিয়ে দেন। মোট ১২ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরও আজ পর্যন্ত তার হাতে কোনো নিয়োগপত্র পৌঁছায়নি।

হাইকোর্টে মামলা, পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব

এই প্রতারণার ঘটনা সামনে আসার পর সুদীপ কর্মকার ও তার পরিবার ২০২৩ সালের জুন মাসে গোবরডাঙ্গা থানায় এফআইআর দায়ের করেন। তবে অভিযোগ, এতদিন কেটে গেলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এই প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে মামলা দায়ের হয়। বিচারপতি ইতিমধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত রিপোর্ট তলব করেছেন এবং তা পয়লা জুলাইয়ের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

পর্ষদের ইমেইল হ্যাক নাকি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র?

এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে — সত্যিই কি পর্ষদের ইমেইল আইডি হ্যাক করা হয়েছিল, নাকি অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তির সাহায্যে এই ধরনের চক্র তৈরি করা হয়েছে? পর্ষদের তরফে দাবি করা হয়েছে, একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট এবং ইমেইল আইডি তৈরি করে প্রতারণা হতে পারে। কিন্তু সেই হ্যাকিংয়ের তদন্তে আজও কোনো রিপোর্ট জমা পড়েনি।

চাকরির বাজারে ঘুরছে কোটি টাকার লেনদেন?

এখন প্রশ্ন উঠছে, শুধু সুদীপ নন, এমন কতজন চাকরিপ্রার্থী এই প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন? অভিযোগ, টেট উত্তীর্ণ হওয়ার নামে ১০–১২ লক্ষ টাকা আদান-প্রদানের ঘটনা আর নতুন নয়। কিন্তু এবার তা আদালতের নজরে আসায় বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তা সময়ই বলবে।


উপসংহার:

এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কতটা গভীর দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। ইমেইলের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীকে উত্তীর্ণ দেখানো, কোটি টাকার লেনদেন, এবং তদন্তে ধীরগতি — সব মিলিয়ে জনমানসে ভরসার জায়গা নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। এখন নজর ১ জুলাইয়ের দিকে, যখন তদন্ত রিপোর্ট পেশ হওয়ার কথা। তখনই হয়তো জানা যাবে — এটা ছিল কোনো হ্যাকিং-এর ঘটনা, নাকি বহুদিন ধরে চলা এক গভীর ষড়যন্ত্রের বাস্তব চিত্র।

Related Posts

21 July Shahid Dibas 2025: মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের ‘ঘর ভাঙা’ কৌশলে তৃণমূলের ভিত কাঁপছে!

21 July Shahid Dibas 2025 বাংলা রাজনীতির অন্যতম আলোচিত দিন। প্রতি বছর এই দিনটিকে শহিদ দিবস (Shahid Dibas) হিসেবে পালন করে Trinamool Congress (TMC)। ২০২৫ সালে সেই দিনের আবেগময় রাজনীতিতে…

21 July Shahid Dibas 2025: ধর্মতলায় কর্মী-সমর্থকদের ঢল, গোটা কলকাতা নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা

21 July Shahid Dibas 2025—শুধু একটি তারিখ নয়, এটি West Bengal-এর রাজনীতিতে এক গভীর আবেগের নাম। প্রতি বছর এই দিনে Trinamool Congress (TMC) শহিদ দিবস বা Shahid Dibas পালন করে,…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *