চাকরি ফিরে পাওয়ার লড়াই: নতুন পরীক্ষা নিয়ে চাকরিহারাদের ক্ষোভ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দোলাচলে রাজ্য সরকার

কলকাতা, ২৭ মে: চাকরি ফিরে পাওয়ার লড়াই: রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার স্কুল শিক্ষকের চাকরি। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে এবং তার জন্য ৩১ মে-র মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে হলফনামা জমা দিতে হবে। ঠিক এই নির্দেশ ঘিরেই তীব্র বিতর্ক এবং ক্ষোভের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার এবং আন্দোলনরত চাকরিহারারা।

সুপ্রীম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে—যাঁরা অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁরা পরীক্ষায় বসতে পারবেন না এবং তাঁদের বেতন বন্ধ থাকবে। কিন্তু যাঁরা অযোগ্য নন, শুধুমাত্র প্রক্রিয়াগত কারণে চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরাও কি আবার পরীক্ষায় বসতে বাধ্য হবেন?

চাকরি ফিরে পাওয়ার লড়াই: “আমরা কেন আবার পরীক্ষা দেব?”

চাকরি ফিরে পাওয়ার লড়াই

চাকরি হারানো শিক্ষকরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আর কোনওভাবেই নতুন করে পরীক্ষায় বসতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, একবার পরীক্ষা দিয়ে, সমস্ত নিয়ম মেনেই তাঁরা চাকরি পেয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ নেই, এমনকি সিবিআই বা ED-এর তদন্তেও কিছু প্রমাণ মেলেনি। তাহলে কেন তাঁদের আবার নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে?

চাকরিহারাদের বক্তব্য, “আমরা পরীক্ষা দিয়ে এই চাকরি পেয়েছি। আমাদের বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতি বা বেআইনি নিয়োগের অভিযোগ নেই। শুধুমাত্র কিছু প্রক্রিয়াগত ত্রুটির জন্য আমাদের চাকরি বাতিল হয়েছে। এখন আবার নতুন করে পরীক্ষা দিয়ে সেই পদে বসার অর্থ আমাদের আত্মসম্মানহানী। আমরা চাই, রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে আমাদের চাকরি ফিরে দেওয়া হোক।”

সরকারের দ্বৈত অবস্থান: বিজ্ঞপ্তিও জারি হবে, রিভিউয়ের অপেক্ষাও চলবে

মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তারা অমান্য করতে পারবেন না। তাই ৩০ মে-র মধ্যেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হয়েছে, যাতে চাকরি হারানোদের পুনর্বহাল করার আবেদন জানানো হয়েছে।

যেহেতু বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ চলছে, রিভিউ পিটিশন শোনার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার দ্বৈত পদক্ষেপ নিচ্ছে—একদিকে আদালতের নির্দেশ পালন, অন্যদিকে চাকরিহারাদের স্বার্থ রক্ষা।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই না কারও চাকরি যায়। কিন্তু আমরা আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারি না। তাই আদালতের নির্দেশ মেনেই বিজ্ঞপ্তি জারি করছি। পাশাপাশি রিভিউ পিটিশনের ফলাফলের উপর নজর রাখছি। যদি রিভিউতে রায় আমাদের পক্ষে যায়, তাহলে এই বিজ্ঞপ্তি প্রয়োজনে বাতিল হবে।”

পরীক্ষার নতুন সময়সূচি

সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, অনলাইন আবেদন শুরু হবে ১৬ জুন থেকে, শেষ তারিখ ১৪ জুলাই। প্যানেল প্রকাশ হবে ১৫ নভেম্বর এবং কাউন্সেলিং শুরু হবে ২০ নভেম্বর থেকে। এই সময়সীমা রাখা হয়েছে যাতে রিভিউ পিটিশনের রায় আসার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।

ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ রায়ের উপর

ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ রায়ের উপর

এই মুহূর্তে রাজ্যের হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী ও চাকরি হারানো শিক্ষকরা এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা একদিকে আশা করছেন, রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে তাঁরা চাকরি ফিরে পাবেন, আবার অন্যদিকে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি তাঁদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ তৈরি করছে।

এখন অপেক্ষা শুধুই সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী রায়ের। সরকার ও চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে গড়ায়, তা নির্ভর করছে সেই সিদ্ধান্তের উপর।


পাঠকের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন। এই ধরনের আপডেট পেতে আমাদের সাইটে নজর রাখুন।

  • Related Posts

    21 July Shahid Dibas 2025: মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের ‘ঘর ভাঙা’ কৌশলে তৃণমূলের ভিত কাঁপছে!

    21 July Shahid Dibas 2025 বাংলা রাজনীতির অন্যতম আলোচিত দিন। প্রতি বছর এই দিনটিকে শহিদ দিবস (Shahid Dibas) হিসেবে পালন করে Trinamool Congress (TMC)। ২০২৫ সালে সেই দিনের আবেগময় রাজনীতিতে…

    21 July Shahid Dibas 2025: ধর্মতলায় কর্মী-সমর্থকদের ঢল, গোটা কলকাতা নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা

    21 July Shahid Dibas 2025—শুধু একটি তারিখ নয়, এটি West Bengal-এর রাজনীতিতে এক গভীর আবেগের নাম। প্রতি বছর এই দিনে Trinamool Congress (TMC) শহিদ দিবস বা Shahid Dibas পালন করে,…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *