
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: এক নজরে সংঘর্ষের ভয়ঙ্কর রূপ
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ১৩ জুন শুরু হওয়ার পর থেকে চরম আকার ধারণ করেছে। ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী (IRGC) ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের নাগরিক স্থাপনার উপর। দক্ষিণ ইসরায়েলের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে সরাসরি হামলা চালানো হয়, যা হাসপাতালের আইসিইউ ধ্বংস করে এবং অনেক রোগী ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়ে।
১. হাসপাতাল লক্ষ্যবস্তু – মানবিক বিপর্যয়
এই হামলা যুদ্ধকে নতুন রূপে নিয়ে গেছে। সাধারণত যুদ্ধবিরোধী আইন অনুযায়ী হাসপাতালকে হামলার বাইরে রাখা হয়, কিন্তু ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ সেই সীমা ভেঙেছে। সোরোকা হাসপাতালের উপর এই আঘাত মানবিক সংকট তৈরি করেছে, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
২. ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা
ইসরায়েলের আধুনিক “আয়রন ডোম” প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সক্ষম হলেও ইরানের বড় পরিসরের ও নির্ভুল হামলা বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র শহরাঞ্চলে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। এর ফলে তেল আভিভ, হোলনের মত গুরুত্বপূর্ণ শহরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
৩. মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব – আতঙ্ক ও ভয়ের পরিবেশ
ইসরায়েলি নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক এবং মানসিক চাপ বেড়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শব্দ, ধ্বংসস্তূপ, এবং মৃত্যু – সব মিলিয়ে জনমনে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। এই মানসিক চাপ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেও প্রভাব ফেলছে।
৪. রাজনৈতিক অবস্থান – প্রতিশোধের হুমকি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন এবং ইরানের পারমাণবিক হুমকি ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিটি বক্তৃতায় যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার বার্তা পাওয়া যাচ্ছে।

৫. ইরানের অবস্থান – সামরিক লক্ষ্যবস্তু দাবি
ইরান দাবি করছে তারা সোরোকা হাসপাতালের পাশের সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করেছিল, এবং বেসামরিক স্থাপনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করেনি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে প্রতিটি হামলায়।
৬. আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ঝুঁকি
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ এখন আর সীমিত নেই। এটি সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে প্রতিবেশী দেশগুলো ও বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে। এর ফলে তেল সরবরাহ, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতেও বড় প্রভাব পড়তে পারে।
৭. পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা
ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
উপসংহার
বর্তমান ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুধু একটি সামরিক সংঘর্ষ নয়, বরং এটি মানবিক, রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক স্তরে গভীর প্রভাব ফেলছে। হাসপাতাল ধ্বংস, নাগরিক আতঙ্ক, পারমাণবিক হুমকি এবং কূটনৈতিক অচলাবস্থা – সব মিলিয়ে এটি একটি ভয়াবহ সংকট। এখনই যদি শান্তির উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী ও আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে।