
ভারতের অন্যতম প্রান্তিক ভাষা কন্নড়কে বিশ্বের সাহিত্যের মঞ্চে তুলে ধরলেন লেখিকা, আইনজীবী ও সমাজকর্মী বানু মুশতাক। তাঁর ছোটগল্প সংকলন “হার্ট ল্যাম্প” আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতে নিয়েছে, যা কন্নড় ভাষায় রচিত প্রথম বই হিসেবে এই গৌরব অর্জন করল। শুধু তাই নয়, এটি আন্তর্জাতিক বুকার পাওয়া প্রথম ছোটগল্প সংকলন হিসেবেও ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।
‘হার্ট ল্যাম্প’— জীবনের প্রতিচ্ছবি
এই সংকলনে রয়েছে ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে লেখা বারোটি ছোটগল্প, যেখানে দক্ষিণ ভারতের মুসলিম নারীদের জীবনের দুঃখ-দুর্দশা, সংগ্রাম ও আত্মবিশ্বাস গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। গল্পগুলোর ইংরেজি অনুবাদ করেছেন দীপা ভাস্তি, যিনি বানুর পাশাপাশি পুরস্কারের £৫০,০০০ অংশীদার।
বিচারকমণ্ডলী বানুর চরিত্রগুলিকে “বেঁচে থাকার অবিশ্বাস্য প্রতিকৃতি” বলে প্রশংসা করেছেন।
এক অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য
পুরস্কার গ্রহণকালে বানু বলেন,
“এই বইটি জন্মেছে এই বিশ্বাস থেকে যে কোনও গল্পই ছোট নয়। মানব জীবনের জটিল অভিজ্ঞতার প্রতিটি সুতাই একটি বড় সত্য ধারণ করে।”
তিনি আরও বলেন,
“এই বিভাজনের যুগে সাহিত্যের মতো পবিত্র স্থান খুব কম, যেখানে আমরা কিছুক্ষণের জন্য হলেও একে অপরের মনের ভেতরে বাস করতে পারি।”
নতুন দিগন্ত খুলল অনুবাদের
বুকার পাওয়া প্রথম ভারতীয় অনুবাদক হিসেবে দীপা ভাস্তি জানান,
“এই সাফল্য হয়তো আরও কন্নড় ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় ভাষা থেকে অনুবাদের রাস্তা খুলে দেবে।”
আঞ্চলিক সাহিত্যের জয়গান
পেঙ্গুইন ইন্ডিয়ার প্রধান সম্পাদক মানসী সুব্রামানিয়াম বলেন,
“২০২২ সালে ‘টম্ব অফ স্যান্ড’ (গীতাঞ্জলি শ্রী, হিন্দি) বিজয়ের পর এবার ‘হার্ট ল্যাম্প’ প্রমাণ করল, ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষার সাহিত্যকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

বানু মুশতাক: সাহিত্যের পিছনের সংগ্রামী কাহিনি
কর্ণাটকের এক ছোট শহরে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা বানু মুশতাক প্রথমে উর্দু মাধ্যমে কুরআন শিক্ষা পান। তাঁর বাবা, যিনি সরকারি কর্মচারী ছিলেন, কন্যার জন্য বড় স্বপ্ন দেখতেন। আট বছর বয়সে তাঁকে ভর্তি করা হয় একটি কনভেন্ট স্কুলে, যেখানে শিক্ষা হতো কন্নড় ভাষায়।
এই অপরিচিত ভাষাটিই এক সময় হয়ে ওঠে তাঁর সাহিত্যিক আত্মপ্রকাশের মাধ্যম।
বিয়ের পরে কঠিন সময়ে তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। স্বামীকে ভালোবেসে বিয়ে করলেও দাম্পত্যজীবনে আসে সংকট। সেই দুঃসময়েই এক স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম গল্প, যেটি ছিল সমাজ ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে এক সাহসী প্রতিবাদ।
গল্পে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি
বানুর লেখা গল্পগুলো শুধুই কল্পনা নয়, বরং তার বাস্তব জীবনের প্রতিফলন। সমাজের কঠোরতা, ধর্মীয় রক্ষণশীলতা, নারীর কণ্ঠরোধ—সবই তিনি তুলে ধরেছেন গল্পের চরিত্রগুলির মাধ্যমে।
“হার্ট ল্যাম্প এক ধরনের নীরব শক্তির কথা বলে,” — এমন মন্তব্য করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
“যেখানে মানুষের প্রান্তিক জীবনের প্রতি ছোট ছোট বিষয়েও মনোযোগী হওয়া উচিত — এটিই বানুর গল্পের আসল শক্তি।”
উপসংহার
বানু মুশতাকের এই জয় শুধুই তাঁর একার নয়। এটি ভারতের আঞ্চলিক সাহিত্য, নারীর কণ্ঠস্বর এবং কন্নড় ভাষার জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তাঁর লেখা ‘হার্ট ল্যাম্প’ আজ বিশ্ব সাহিত্যে নতুন আলো ফেলেছে, যা আগামী দিনের বহু লেখক, অনুবাদক এবং পাঠককে সাহস ও অনুপ্রেরণা দেবে।
✍️ লেখক: ajke.in সংবাদ ডেস্ক
🗓️ প্রকাশিত: 21 may 2025
📚 বিভাগ: সাহিত্য | আন্তর্জাতিক | নারী ও সমাজ